আখেরাতের বাসিন্দা মানুষ মুসাফির দুনিয়ায়
১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৪ এএম
এ দুনিয়ায় মানুষ প্রবাসী। আখেরাতের অনন্ত জিন্দেগীর সে বাসিন্দা। কবরের যাত্রী হয়ে ক্ষনিকের এ দুনিয়ার মায়ায় মত্ত থাকা নির্বোধের পরিচয়। যার মধ্যে দুনিয়া সম্পর্কে কিঞ্চিত বুঝ শক্তি আছে অর্থাৎ পাগল নয় তার পক্ষে আখেরাতের জীবন কে ভুলে থাকা সম্ভব নয়। অথচ দেখা যায় যাদের মধ্যে দুনিয়াদারীর বুঝটা সূক্ষ্ণ তারাই পরকালের জীবনের কথা আদৌ ভাবে না। তাদের জীবন যাত্রা আবলোকন করলে মনে হয় দুনিয়াটা তাদের নিকট স্থায়ী। বাস্তবিকই তাই? দুনিয়াটা অস্থায়ী জায়গা। সুতরাং মানুষও এখানে অস্থায়ী বাসিন্দা। মানুষ মরণশীল একথা সর্বসাধারণ জানা সত্বেও মরণের কথা ক'জনই বা সরণ করে চলে। মানুষের হায়াতে জিন্দেগীর সার্বক্ষনিক সাথী হচ্ছে মরণ। এই মরণকে সরণ করে যে প্রতিদিনের আল্লাহ পাকের হুকুম ফরজ ওয়াজিব ও সুন্নত প্রতিপালন করে চলে, রাসুল স. এর নিয়মানুসারে সেই ব্যক্তিই প্রকৃত জ্ঞানী ও ভাগ্যবান। দুনিয়ার কাজকর্ম, দায়িত্ব-কর্তব্য, আরাম আয়েশ সবকিছুর মধ্যেও মৃত্যুকে মনে করে সার্বক্ষণিক পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে চলাই তো আখেরাতের বাসিন্দার করণীয়। মানুষ যখন দুনিয়ার আপন ও প্রীয়জন পরিত্যক্ত হয়ে অন্ধকার গহীন কবরে প্রবেশ করবে তখন মানুষ নিজেকে বড় অসহায় ও একাকিত্ব মনে করবে। একমাত্র দুনিয়ায় অর্জিত পুঁজি অর্থাৎ নেক আমল ছাড়া তখন আর কেউ সাথী হবে না। সেই দুঃসময়ের কথা মনে করে তার পুঁজি দুনিয়াতে অর্জন করে চলাই ধার্মিকের পরিচয়। মানুষকে মরতে হবে এবং কবরের মধ্যে তাকে যেতে হবে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার কালামে পাকের সুরা ত্বহার ৫৫ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন- "ওয়াফিহা নুঈদুকুম” অর্থ্যাৎ ওতেই (মাটিতে) তোমাদের ফিরিয়ে দেব। এখানে মাটিতে বলতে কবরস্থানকে বুঝানো হয়েছে। কি যে উপায় হবে প্রভু কবরে, মুনকার নাকীরের জওয়াব দিও আমারে। কবরের করুন অসহায় পরিবেশে আল্লাহ পাকের রহমত ছাড়া বান্দার কোনো উপায় থাকবে না।
হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত ঈমাম গাজ্জালী র. তাঁর দাকায়েকুল আকবার কিতাবে উল্লেখ করেছেন- “হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে- মানুষের মধ্যে কুকুরের পাঁচটি স্বভাব থাকা প্রয়োজন।“ কুকুর একটি নিগৃহীত প্রাণী। সে চতুষ্পদ একটি জন্তু। কুকুরের স্বভাব মানুষের মধ্যে থাকা কাম্য নয়। তবে কুকুরের যে স্বভাবগুলো গুনাবলীর দিকদিয়ে নিদর্শন হিসেবে চিহ্নিত, মানুষের মধ্যে তদ্রপ আচরন থাকলে মানুষের জন্যে যা শোভনীয় হয় তা অবশ্য গ্রহণীয়। কুকুর দুটি বিশেষ গুনের অধিকারী। এক হচ্ছে কুকুর অত্যন্ত প্রভূ ভক্ত প্রাণী আর এক হচেছ প্রণীর মধ্যে কুকুরের ঘ্রানেন্দীয় শক্তি প্রখর। এ দুটি গুন কুকুরের জন্মগত স্বভাবজাত। সৃষ্টির নিগৃহীত এই প্রানির মধ্যে আজও তার স্বভাবজাত বৈশিষ্ঠ অক্ষুন্ন রয়েছে। অনেক প্রাণীই তো দেখা যায়, বির্বতনের ধারায় কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। আর কোনো প্রাণী তার স্বভাব ধর্ম হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু কুকুর অদ্যাবধি তার স্বভাব ধর্ম ধরে রাখতে পেরেছে। তাই তো আজকের বিশ্ব যেখানে মানুষের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, সেখানে মানুষের পরিবর্তে কুকুরকে দিয়ে কাজ করছে, এ নজির তো আজ কারো অজানা নয়।
কুকুরের পাঁচটি স্বভাবের মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে কুকুর সদা সর্বদা ক্ষুধার্থ থাকে। নেককারের উচিৎ ক্ষুধার্থ অবস্থায় থাকা। কুকুর অধিক সময় ক্ষুধার্থ থাকে। এটা শুধু খাদ্য অভারের জন্যে নয়। এটা কুকুরের স্বভাব জাত। এই স্বভাবেব ভিতরে যে গুনের পরিচয় পাওয়া যায় তা হচ্ছে ধৈর্যের। সুতরাং কুকুরের মধ্যে স্বভাবজাত ধৈর্য গুন বিদ্যামান দেখা যায়- যা মানুষের বেলায় অনুসরণ যোগ্য। এই অনুসরণে অর্থাৎ ক্ষুধার্থ থাকা অবস্থায় মানব দেহের রিপু দমিত থাকে। দেহের রিপু যখন দমিত থাকে তখন স্বভাবত মানুষ খারাপের দিকে ধাবিত হয় না। ক্ষুধার্থ থাকা অর্থ না খেয়ে থাকা নয়। খাবার গ্রহনের মধ্যবর্তী সময়ে যতটা সম্ভব ক্ষুধার্থ থেকে খাবার গ্রহণ করা। আমিরিকান বিজ্ঞানীগন আবিস্কার করেছেন, ক্ষুধার্থ থাকলে শরীরে এক প্রকার প্রতিরোধক ক্ষমতা সৃষ্টি হয় যা শরীরের জন্যে মহা কল্যাণকর। অনবরত খাদ্য গ্রহণ করতে থাকলে লিবারের উপর চাপ সৃষ্টি হয়। যে চাপ অব্যাহত থাকলে এক পর্যায়ে লিবারের কার্য ক্ষমতা কমে যায়। ফলে লিবার দুর্বল হয়ে পড়ে। পরিণতিতে সৃষ্টি হয় জন্ডিস রোগ। ঘনো ঘনো এবং বেশি বেশি খাদ্যাভাসে দেহে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ইসলামের সুন্নতি নিয়ম হচ্ছে এক তৃতীয়াংশ খালি রেখে খাবার খাওয়া। নবী রাসুল ওলী দরবেশগন কম খেয়ে জীবন কাটিয়েছেন অতি সুস্থ ভাবে।
মানুষের সারা জীবনের খাদ্যের পরিমান তার ভাগ্যে নির্ধারন করা থাকে। এই নির্ধারিত খাদ্য জীবনের হায়াতের সাথে পরিসমাপ্তি ঘটে থাকে। তাই খাদ্যাভাসে অপচয় ঘটলে হায়াতের তুলনায় খাদ্যের টান পড়ে থাকে। খাদ্যাভাসের মধ্যে অপচয় না করে সংযমী খাদ্যাভাস গড়তে পারলে হায়াত ও খাদ্যের সমন্বয় সাধিত হয়। ফলে জীবনের সমাপ্তি ঘটে সার্থক ও সুন্দর ভাবে। বান্দা বেশি বেশি সময় ক্ষুধার্থ থাকলে তার মনে খোদাভীতি ও খোদাপ্রীতি জমে। সুতরাং যে অভ্যাসটি মানুষকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করে তা নিঃসন্দেহে গ্রহণীয়। অতএব কুকুরের ক্ষুধার্থ থাকা অভ্যাসটি মানুষ আয়ত্ব করতে পারলে তার জন্যে কল্যাণকর।
দ্বিতীয় হচ্ছে কুকুর সারা রাত বিনীদ্রাবস্থায় স্বীয় প্রভুর বাড়ি পাহারা দেয়, সৎলোকের কাজ রাত জেগে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকা। কুকুর প্রভুভক্ত প্রাণী। রাতের বেলায় প্রভুর উপকারার্থে আরামের ঘুমকে পরিহার করে প্রভুর প্রতি কৃতজ্ঞাতা জ্ঞাপনার্থে প্রভূর বাড়ি পাহাড়া দেয়। কুকুরের এ দায়িত্ব শিখিয়ে দেয়া হয় না। এটা তার স্বভাবজাত দায়িত্ব। মানুষ কৃতজ্ঞতা স্বরূপ মহান আল্লাহর ইবাদত করবে। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন দয়া পরবশ হয়ে মানুষকে সুন্দর আকৃতি, সুন্দর ভাষা ও বাকশক্তি দান করেছেনে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআন শরিফে সুরা আর রাহমানের প্রথমেই উল্লেখ করেছেন। আর রহমান, আল্লামাল কুরআন, খালাকাল ইনছান, আল্লামাহুল বায়ান। অর্থ্যাৎ আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টি করে তাকে কোরআন এবং ভাষাশক্তি ও বাকশক্তি দান করেছেন। আল্লাহ পাকের নৈকট্য লাভের জন্যে নবী রাসুলগন আরাম আয়েশকে বিসর্জন দিয়ে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। ফরয ইবাদতের বাইরে যে ইবাদতে আল্লাহ তায়ালার অধিক সান্নিধ্য লাভ করা যায়, সেটাও রাতের বেলায় তাহাজ্জুদ নামায, যে ইবদতে রাতের ঘুম পরিহার করতে হয়। নবী করিম সা. রাতের দুই তৃতীয়াংশ কখনো বা এক তৃতীয়াংশ সময় দাড়িয়ে দাড়িয়ে ইবাদত করতেন। এতে তার পবিত্র কদম মোবারকদয় ফুলে যেত। হযরত রাবেয়া বসরী সারা রাত জেগে নফল নামাজ পড়তেন কখনো কখনো ওস্তাদ হাসান বছরীর সাথে তাছাউব বিষয়ে আলোচনা করে রাত কাটিয়ে দিতেন। এ সবই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ। ঐ ব্যক্তিই মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে অতিপ্রিয় যে আল্লাহ তায়ালার প্রতি যত বেশী কৃতজ্ঞতাশীল। সুতরাং রাতের ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ পাকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা সৎ লোকের নিদর্শন। সৎ লোক অর্থ্যাৎ খোদাভীরু লোক সদাসর্বদা কবরের কথা চিন্তা করে আর রাত জেগে জেগে তার পাথেয় উপার্জন করে থাকে। কেননা কবরের পুঁজি দুনিয়াতেই অর্জন করতে হয়। কবরে মানুষ যেমন নিরূপায় হয় তেমনি হয় অসহায়। যা দুনিয়ার হায়াতের জিন্দেগীতে মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন। (চলবে)
লেখক শিক্ষাবীদ গবেষক ইসলামী চিন্তাবীদ
বিভাগ : ধর্ম দর্শন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়ায় মেয়েকে হত্যা করে মায়ের আত্মহত্যা, চিরকুট উদ্ধার
বিবাহ বিভ্রাটে তৌহিদ আফ্রিদি, স্যোশ্যাল মিডিয়ায় শালিকা নিয়েছে বউয়ের অবস্থান
বিদেশি হস্তক্ষেপে বিগত সরকার ফ্যাসিস্টে পরিণত হয়েছিলো : আসিফ নজরুল
মাদক নির্মূলে কঠোর অবস্থানের ঘোষনা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
নারায়ণ চন্দ্রকে আদালত চত্বরে ডিম নিক্ষেপ
সেই কবি এবার ৬৯ বছর বয়সে এইচএসসি পাস করলেন
ফিলিপাইনে টাইফুন উসাগির আঘাত
যশোরে ছুরিকাঘাত করে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় মামলা
চুয়াডাঙ্গার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হলেন যশোরের বিচারক শিমুল
জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার অন্যতম লক্ষ্য ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন : ভূমি উপদেষ্টা
২০ হাজার ওমরাযাত্রী অনিশ্চয়তায়, ওমরাহ টিকিটে এক লাফেই ১৭ হাজার টাকা বৃদ্ধি
সংষ্কার কাজ দ্রুত শেষ করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন -মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম
কটিয়াদীতে যুবকের লাশ উদ্ধার, স্ত্রী আটক
বেনাপোল বন্দরে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন, কমবে ভোগান্তি, বাড়বে বাণিজ্য
যশোর বোর্ডে এইচএসসিতে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন ৬৬ হাজার, পরিবর্তন ৭১ জনের
আইএইচএফ ট্রফির বাছাইপর্বে অংশ নিবে ইয়ুথ ও জুনিয়র হ্যান্ডবল দল
ফের কমলো সোনার দাম
সাফজয়ী দলকে আর্থিক পুরস্কার দিল সাউথ ইস্ট ব্যাংক
২৪২ সদস্যবিশিষ্ট ঢাবি ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ
গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমানের পরিবারের পাশে তামিম